টানাবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলার ৬০টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ বানভাসি। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও আসবাবপত্র নিয়ে মহাসড়ক, বাঁধ, ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন তারা।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার কাকারা এলাকায় বানের পানিতে ঘর ডুবে যাওয়ায় গবাদিপশু ও পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবন্ধী আব্দুল হামিদ। তবে গেলো দুদিনেও মেলেনি কোনো ধরনের খাদ্য সহায়তা।
তিনি বলেন, ‘দুদিন হলো, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করছি। ঘরের টিনের ছাউনি পর্যন্ত পানি। জীবন বাঁচাতে এখানে এসেছি। কিন্তু এখন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে আছি।’
শুধু আব্দুল হামিদ নন, বানের পানিতে খাদ্য সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চকরিয়া উপজেলার লাখো বানভাসি।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের খুরশিদা বেগম (৩০) বলেন, ‘গেলো ২ দিন ধরে রান্না করতে পারছি না। ঘরের ভেতর প্রায় কোমর সমান পানি। খাটের ওপর কোনো রকমে বসবাস করছি। বাইরে থেকে শুকনো খাবার কিনে এনে খাচ্ছি। বিশুদ্ধ পানি নেই কোথাও।’
চকরিয়ার জেদ্দা বাজারের রাবেয়া বেগম (৫০) বলেন, ‘নলকূপগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি না। কলাগাছের ভেলায় চড়ে চলাফেরা করছি।’
কাকারা গ্রামের পানিবন্দি কৃষক আলী হোসেন (৫৫) জানান, বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। একদিকে পাহাড়ি ঢলের পানি, অন্যদিকে বৃষ্টি। এ অবস্থায় বাড়িঘর ছেড়ে মহাসড়কে আশ্রয় নিয়েছেন; রয়েছেন খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও মনে করছেন, হাজার হাজার মানুষ অনাহারে আর পানি সংকটে থাকলেও কোনো কিছুই করতে পারছেন না তারা।
চকরিয়ার লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ নাজিম উদ্দিন বলেন, পুরো চকরিয়াবাসী এখন পানিবন্দি। যেদিকে তাকাই শুধু পানি আর পানি। পুরো উপজেলার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত সহযোগিতা পৌঁছায়নি। তাই দ্রুত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির দরকার বলে তিনি জানান।
বানভাসিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন বলছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেয়ান বলেন, বানের পানির কারণে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এখন প্রতিটি এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পৌঁছানো একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও ট্রলার ও স্পিডবোট যোগে সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা রান্না করা খাবার সরবরাহ করছেন।
প্লাবিত এলাকায় এরই মধ্যে ৫৮ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ টাকা বিতরণ করেছে প্রশাসন। আর উদ্ধার তৎপরতাসহ সার্বিক সহায়তার জন্য সেনা ও নৌবাহিনী মাঠে রয়েছে ।