১৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ || ৩রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

তাদেরই  বলে  বিশ্বসেরা খেলোয়াড় যারা দলের প্রয়োজনে জ্বলে ওঠবেন। মেসিকে কেন তর্ক সাপেক্ষে সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলা হয় তা যেন আরও একবার প্রমাণ করলেন তিনি। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে জয় পেতেই হবে মেক্সিকোর বিপক্ষে। এমন কঠিন মুহূর্তে দল যখন ৬০ মিনিটেও গোল পাচ্ছিল না ঠিক তখনই যেন আলোকবর্তিকা হয়ে আর্জেন্টিনার স্বপ্নের পারদে ঢেউ লাগান মেসি। মেসি এবং এনজো ফার্নান্দেজের করা গোলেই মেক্সিকোকে ২-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে টিকে রইলো আর্জেন্টিনা।

পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে এদিন মেক্সিকোর বিপক্ষে খেলতে নামে স্কালোনির দল। মেসিদের বিপক্ষে ৫ ডিফেন্ডারের কৌশল নিয়ে দল সাজান মেক্সিকোর আর্জেন্টাইন কোচ টাটা মার্টিনো।

বল দখলে মেসিরা শুরু থেকে এগিয়ে থাকলেও পুরো ম্যাচে একটিও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আর্জেন্টিনা বরং মেসিদের থেকে উজ্জ্বল ছিল মেক্সিকো। ১৪ মিনিটে মাঝমাঠের বাইরে থেকে নেওয়া মেক্সিকান ভেগার ফ্রি কিক থেকে বল ডিক্সের ভেতরে গেলেও আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সেটি দ্রুত গতিতে লুফে নেন।

আগের ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে পোল্যান্ডের জয়ে এই ম্যাচে তাই জিততেই হবে আর্জেন্টিনাকে। ৩৩ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া মেসির ফ্রি কিক ওচোয়া পাঞ্চ করে ক্লিয়ার করেন। ৪০ মিনিটে কর্নার থেকে ডি মারিয়ার ক্রসে লাউতারো মার্টিনেজের হেড খুজে পায়নি গোলের দেখা। খেলা শেষের এক মিনিট আগে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিক পায় মেক্সিকো। ভেগার দুর্দান্ত ফ্রি কিক ডান পাশে লাফিয়ে দুর্দান্তভাবে গ্লাভস বন্দী করেন এমি মার্টিনেজ। গোলশূন্য অবস্থাতেই বিরতিতে যায় দুই দল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলের জন্য চাপ বাড়াতে থাকে আলবিসেলেস্তারা। ৫৩ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে মেসিকে ফাউল করা হলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির বা পায়ের ফ্রি কিক গোলবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। এর ঠিক ১১ মিনিট পরেই আসে মেসির সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। ডি মারিয়ার পাস থেকে দুর্দান্ত শটে ডিবক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন মেসি।

গোল দিয়ে আর্জেন্টিনা কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে। মেক্সিকোর সুযোগগুলো রক্ষণভাগেই শেষ করে দিচ্ছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচ যখন শেষের দিকে ১-০ ব্যবধানে আগাচ্ছে ঠিক তখনই আবার গোল করে আর্জেন্টিনা।

এবার মেসির বাড়ানো বলে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল করলেন বেনফিকার আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রংধনু শটে অসাধারণ এক গোল করেন এনজো ফার্নান্দেজ। তার অসাধারণ গোলে আর্জেন্টিনা পায় ২-০ গোলের লিড। ম্যাচের শেষে আর কোনো গোল না হওয়ায় আর্জেন্টিনা ২-০ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে। বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডে যেতে আর্জেন্টিনাকে পরের ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও জিততে হবে।

শনিবার কাতার বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপে বাঁচা-মরার ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো। লুসাইল স্টেডিয়ামে খেলাটি মাঠে গড়িয়েছে বাংলাদেশ সময় রাত একটায়। বিশ্বকাপে এটি ৩৫ বছর বয়সী মেসির ২১তম ম্যাচ। ফুটবলের বিশ্ব আসরে সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলেছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তি ম্যারাডোনাও। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড এখন যৌথভাবে দুজনের দখলে।

১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ মিলিয়ে ২১টি ম্যাচ খেলেছিলেন ম্যারাডোনা। ফুটবল ঈশ্বর খ্যাত তারকার অসামান্য নৈপুণ্যে মেক্সিকোর মাটিতেই ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল আর্জেন্টিনা। সময়ের অন্যতম সেরা তারকা মেসির বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালে। এবারের আগে আরও তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে ফাইনালে উঠেছিল আলবিসেলেস্তেরা। কিন্তু ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে শিরোপার স্বপ্ন ভেঙে যায় তাদের।

আগের ২০ ম্যাচে মেসি গোল করেছেন সাতটি। ম্যারাডোনা আট গোল করেছিলেন ২১ ম্যাচে। সমান সংখ্যক গোল আছে গিলের্মো স্তাবিলের। ১৯৩০ সালে উদ্বোধনী বিশ্বকাপে চার ম্যাচে আট গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার পক্ষে সর্বোচ্চ গোলদাতার মালিক গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। ১২ ম্যাচে তার নামের পাশে রয়েছে ১০ গোল।

উল্লেখ্য, সৌদির বিপক্ষে অপ্রত্যাশিতভাবে ২-১ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে নতুন ইতিহাস গড়েন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপে খেলছেন এই মহাতারকা। এছাড়া, তিনি আর্জেন্টিনার প্রথম ও সব মিলিয়ে পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি বিশ্বকাপে গোল দেওয়ার নজিরও গড়েন ।