১৬ ডিসেম্বর আজ মহান বিজয় দিবস।বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। বিশাল আয়োজনে গত বছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে জাতি। এবার বিজয় ৫১ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় পুরো দেশ।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। স্বাধীনতার উত্তাল তরঙ্গে আন্দোলিত এই জাতির ওপর ২৫ মার্চ কালরাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত মানুষের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠলে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিরা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান, বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে।
বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ও বিজয়ের এই দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ উৎসবের রঙে সেজেছে। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ সর্বত্র লাল-সবুজ আলোকসজ্জা চোখে পড়ছে। সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জাতীয় কর্মসূচি উদযাপনের যাবতীয় কাজও প্রায় সম্পন্ন হয়েছে এরই মধ্যে। এখন কেবল বিজয় দিবস উদযাপনের অপেক্ষা।
গেলোবারের বিজয় দিবসের প্রধান আকর্ষণ ছিল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন। এবারের বিজয় দিবসে সামনে এসেছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি। গত চার বছরের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এই বছর রাজপথে দেখা যাচ্ছে উত্তাপ। চলমান কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের টানটান উত্তেজনার মধ্যেই এবারের বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। বাঙালির চিরাচরিত বিজয় উৎসবে এটি ভিন্নমাত্রা যুক্ত করেছে।
দিবসের কর্মসূচি
জাতীয় পর্যায়ে ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তববক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থনরত বিদেশি কূটনীতিকরা, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে।
এদিকে বিজয় দিবসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৬টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ৭ টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। যথাযথ মর্যাদায় সারাদেশে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, গেলোবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশাল আয়োজন ছিল জাতীয়ভবেই। বৈশ্বিক সংকটের কারণে বাংলাদেশেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সে জন্য কৃচ্ছতা সাধনের অংশ হিসেবে এবার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোকসজ্জা করা হয়নি। এ বছর আমরা স্বাধীনতার মাসে রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা অপশক্তি মোকাবিলার শপথ নিতে চাই।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির উদ্যোগে শহীদদের উদ্দেশ্যে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। ওইদিন সকাল ১০টায় শেরেবাংলা নগরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। মাজারে বিএনপি জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। ওইদিন বিকাল ৩টায় নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় র্যালি।