বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আর নেই (ইন্নালিল্লাহি …. রাজিউন)।বৃহস্পতিবার (৩জানুয়ারি) রাতে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আশরাফুল ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যখন আব্দুল জলিল গ্রেপ্তার হন, তখন সৈয়দ আশরাফুল আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সাথে আশরাফুলের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফুল যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং লন্ডনের হ্যামলেট টাওয়ারে বসবাস শুরু করেন। লন্ডনে বসবাসকালে তিনি বাংলা কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। সেসময় তিনি লন্ডনস্থ বাংলাদেশ যুবলীগের সদস্য ছিলেন। আশরাফুল ফেডারেশন অব বাংলাদেশী ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এফবিওয়াইইউ) এর শিক্ষা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে আশরাফুল দেশে ফিরে আসেন এবং জুন ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রীসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদসদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করেন। এক মাস এক সপ্তাহ দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ব্রিটিশ ভারতীয় শীলা ঠাকুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন এবং ২৩ অক্টোবর ২০১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরন করেছেন। তাদের একমাত্র মেয়ে রীমা ঠাকুর লন্ডনের এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন।
২৪ অক্টোবর ২০১৭ সালে সৈয়দ আশরাফুলের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি প্রায়ই অসুস্থ হন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন।