১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ || ২৮শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বর্তমানে দেশব্যাপী  মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা চলছে। জাল পুড়িয়ে এবং নৌকা বিনষ্ট করেও থামানো যাচ্ছে না ইলিশ মাছ ধরা থেকে । কোনো কোনো নদীতীরবর্তী এলাকায় বসেছে ইলিশ মাছের মেলা। ভোরবেলা এবং বিকেল থেকে রাতভর চলছে মাছ কেনাবেচা । দাম অনেক কম হওয়াতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। স্বাভাবিক সময়ে যে ইলিশের কেজি ৫শ’ থেকে ১হাজার টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে দুইশ’থেকে তিনশ’ টাকায়।

ইলিশের অবাধ প্রজনন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ অনুযায়ী ৭ হতে ২৮ অক্টোবর মোট ২২ দিন  ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময়  সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ সময় ইলিশের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্রের ৭০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এছাড়া দেশের ৩৭টি জেলায় সংশ্লিষ্ট সকল নদীতে ইলিশ ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসময় মা ইলিশ সমুদ্র হতে মিঠা নদীর পানিতে ডিম ছাড়বার জন্য আসে বলে প্রতি বছরই দেয়া হয় এ নিষেধাজ্ঞা । এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে রয়েছে জেল-জরিমানার বিধান । কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা ও আইন অমান্য করে বিভিন্নস্থানে গোপনে চলছে মা ইলিশ নিধন।

নিষেধাজ্ঞার এ মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামীকালই। কিন্তু এবার যে কৌশলে ও প্রক্রিয়ায় মা ইলিশ ধরা হয়েছে তা বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে যাতে আমরা এটা থেকে শিক্ষা গ্রহণ নিতে পারি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,, এবার টাকা দিলেই নদীতে ইলিশ ধরার অনুমতি দেয়া হয়েছে বিভিন্নস্থানে। এরপর একশ্রেণির লোভী জেলে গভীর রাত্রে ইলিশ শিকারে বের হয়েছেন আর শিকারকৃত এসবমাছ কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় না করে  নদীতীরবর্তী কিংবা গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে বিক্রি করছে। সরকার ইলিশ মৌসুমে প্রত্যেক গরীব জেলের জন্য ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে । এরপরও এ অনিয়ম ও আইন অমান্য করার বিষয়টি কোনো প্রকারে মেনে নেয়া যায় না। এবার নিষেধাজ্ঞার আগেভাগে ইলিশ আহরণও ছিল সন্তোষজনক। তারপরও কেনো নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে মানা হলো না । এখানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঠিকভাবে নজরদারির অভাবই বড় কারণ। এজন্য যে জনবল ও স্পিডবোটসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম লাগে, তার অভাব বিদ্যমান। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে যে, জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল অনেকে  পান না ঠিকমত। কেউ পেয়েছেন বিলম্বে । আবার কেউ ২০ কেজির জায়গায় পেয়েছেন ১০ কেজি।

যারা অর্থের বিনিময়ে মাছ ধরার সুযোগ করে দিয়েছেন, তারাও সমান অপরাধী,তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কারণেও নিধনের শিকার হচ্ছে মা ইলিশ ।

একটি পূর্ণ বয়স্ক মা ইলিশ ৫লাখ ডিম দেয়। তাই যে বছর মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষা অভিযান সফল হয়, সেই  বছর  বৃদ্ধি পায় ইলিশের উৎপাদনও। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, গত বছর ৫লাখ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৬লাখটন। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বন্ধ করতে হবে কারেন্ট জালের ব্যবহারও । দেশের মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর ও চট্টগ্রামে কারেন্ট জাল তৈরির কারখানা আছে। কোস্টগার্ড ও পুলিশ মাঝেমধ্যে হানা দিলেও জাল উৎপাদন বন্ধ করা যায় নি  । কারণ, এখানেও আছে শর্ষের মধ্যে ভূত। মৎস্য অধিদপ্তরের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি প্রতিটি  অবৈধ জালেরমিল হতে মাসোহারা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  মাসোহারা নিয়ে কারেন্ট জাল উৎপাদন ও জেলেদের মাছ ধবার সুযোগ দেয়ার প্রবণতা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।