‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই, নগর–প্রাণ–প্রকৃতি সাজাই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে নগরীর লালদীঘির মাঠে গতকাল(২৯ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে ‘বৃক্ষরোপণ অভিযান, বনজ ও ফলদ বৃক্ষমেলা–২০১৮’। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ১৫ দিন ব্যাপী এই মেলার উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে সারাদেশে বনভূমির পরিমাণ বাড়ছে। দেশের মোট বনভূমির পরিমাণ এখন ২২ শতাংশ। এরমধ্যে ১৪ শতাংশের বেশি হচ্ছে সবুজ বৃক্ষে আচ্ছাদিত। গত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ছিলো মাত্র ৯ শতাংশ। আমাদের মোট জনসংখ্যার তুলনায় ভূমির পরিমাণ অনেক কম। তারপরেও আমরা সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করছি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজ দেশে সবক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে, একজন প্রবাসী যখন দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে আসেন তখন তার গ্রামকে অচেনা লাগে। বিমান থেকে সে যখন ঢাকার কুড়িল ফ্লাইওভার কিংবা চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার দেখে তখন সে মনে করে হয়তো বিমান ভুল করে অন্য দেশে চলে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, এখন গ্রামে গঞ্জে আর মেঠোপথ দেখা যায় না। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় একইভাবে বনভূমির পরিমাণ বেড়েছে। এর স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ থেকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরস্কার পেয়েছেন। এক সময় বিশ্ববরেণ্য নেতারা এই পুরস্কার পেয়েছিলেন, কিন্তু সেই পুরস্কারটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও পেয়েছেন। তবে এটি আমাদের মানতে হবে, ঘনবসতির এই দেশে বনভূমি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। সামাজিক নানা উন্নয়নের কারণে আজ সংকুচিত হচ্ছে বনাঞ্চল।
বিএনপির সমালোচনা করে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে হাজার হাজার গাছ কেটে উজাড় করেছে। আন্দোলনের সাথে গাছ কাটার সম্পর্কটা কোথায় বুঝলাম না। গাছ তো আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বুঝে না। গাছ আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করছে, এছাড়া এই গাছ আমাদের ছায়া দেয়। বিএনপির কাজই হচ্ছে শুধু সরকারের সমালোচনা করা। তবে এবার বিএনপি নির্বাচনে না আসা মানে হবে এক প্রকার আত্মহত্যা করা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার নূর সিদ্দিকী। এছাড়া বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আবু ফয়েজ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কৃষিবিদ মো. আমিনুল হক চৌধুরী ও বনসংরক্ষণ কমিটির সদস্য মমতাজ বেগম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মেলায় চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য কেন্দ্র, পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের স্টল রয়েছে। এছাড়া বনরূপা নার্সারি, ন্যাশনাল নার্সারি, বাহাদুর নার্সারি, পুষ্পকলি নার্সারি, ফতেয়াবাদ নার্সারি, বনসাই বাড়ি, সবুজ বিপ্লব নার্সারি, ব্র্যাক নার্সারি, চিটাগাং নার্সারি, পুষ্প নার্সারি, চন্দননগর বনফুল নার্সারি, কসমো নার্সারি, আর এন জে নার্সারি, নিউ কসমো নার্সারি, চট্টগ্রাম বাগান পরিবার, এইচ বি আর নার্সারি, সবুজ চট্টগ্রামসহ সরকারী বেসরকারী ৫০টি স্টল এসেছে। অন্যদিকে মেলায় বন বিভাগের আকর্ষণীয় মডেলে পাহাড়, জনপদ, ঝুম, লেক, মৎস্য চাষ, বিভিন্ন বাগান, কেবল কার, বন্যপ্রাণী, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বাঁশ চাষ পদ্ধতি ও নির্মাণ কৌশল মডেল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর ফলদ প্রদর্শনী ইত্যাদি মেলায় আগত দর্শক ও ক্রেতাদের মুগ্ধ করেছে।