পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। ভাইয়ের কাঁধে ভাইয়ের লাশ, মায়ের কোলে আদরের সন্তানের লাশ, স্বজনের চোখে ছিল অশ্রুর জোয়ার। কেঁদেছে আবুতোরাব, কেঁদেছে মিরসরাই, কেঁদেছে সারা দেশ। কাঁদবে না কেন? চোখের অশ্রু কি ধরে রাখা যায়। এক ভয়াল অধ্যায়। দেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। ২০১১ সালের ১১ জুলাই মিরসরাই থেকে খেলা দেখে ট্রাকে ফিরছিলেন মায়ানী ও মঘাদিয়ার বেশ কয়েকটি স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। চালকের অসাবধনায়তায় ট্রাকটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে। দুর্ঘটনায় ৪২ শিক্ষার্থীসহ নিহত হয় ৪৫ জন।
স্মরণকালের ভয়াবহ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় চিরতরে হারিয়ে যায় ৪৫টি তাজা প্রাণ। সেই ট্র্যাজেডিকে ঘিরে এখনো কান্না থামেনি সন্তানহারাদের। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৮টি বছর।
১১ জুলাই। ২০১১ সাল। এ দিনটি মিরসরাইবাসীর কাছে শোকাবহ দিন। সারা জীবন এ দিনটিকে ভুলতে পারবে না মিরসরাইবাসী। কারণ ১১ জুলাই ঘটে যায় বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা মিরসরাই ট্র্যাজেডি। শুধু মিরসরাইয়ের আলোচিত ঘটনা নয়, এটি দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেরও একটি আলোচিত ঘটনায় পারিণত হয়। আলোচিত ঘটনা হবেই না বা কেন? একসাথে অকালেই ঝরে যায় ৪৫টি তাজা গোলাপ। যারা এক সময় গন্ধ বিলাতো দেশ ছাড়িয়ে হয়তো বিশ্বেরও কোনো প্রান্তে। কিন্তু গন্ধ বিলানোর আগেই না ফেরার দেশে চলে যায়। পিতার কাঁধে ছিল পুত্রের লাশ, যা একজন পিতার জন্য সবচেয়ে ভারি বস্তু। ছিল মা, বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর গগণবিদারী আর্তনাদ। কেঁদেছে সবাই, কান্না ছাড়া থাকতে পারেনি কেউ। গ্রামের পর গ্রাম পরিণত হয়েছে কবরের নগরীতে। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো ছিল না সে সময়। স্বজনহারাদের সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঘটনার সংবাদ প্রচার হয়েছিল দেশের সব ধরনের গণমাধ্যমে। সংবাদ প্রকাশ করেছে বিশ্বের আলোচিত সংবাদ মাধ্যম বিবিসি, আল-জাজিরা, রেডিও তেহরান, ভয়েস অব আমেরিকাসহ অসংখ্য সংবাদ মাধ্যম। স্বজনহারা পরিবারগুলোর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে দল-মত, জাতী-গৌত্র নির্বিশেষে ছুটে আসে বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
কি ঘটেছিল?
১১ জুলাই দুপুরে মিরসরাই সদরের স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের পশ্চিম সৈদালী এলাকায় শিক্ষার্থী বহনকারী মিনিট্রাক খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই ৩৯ জন ছাত্রসহ ৪০ জন মারা যায়। মুহূর্তেই পুরো এলাকা নয়, পুরো মিরসরাই নয়, সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘোষণা করা হয় তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক।
নিহতের সংখ্যা ৪৫
১১ জুলাই ঘটনাস্থলে ৪০ জন ও পরে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৫ জন মারা যায়। আহত হয় ১৬ জন শিক্ষার্থী।
ঘটনার পর চালক মফিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাঁচ বছর কারাভোগের পর এখন তিনি মুক্ত। তার এই সামান্য শাস্তি মানতে পারছেন না নিহতদের স্বজন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল কর্তৃপক্ষ কেউই।
এক বাসিন্দা বলেন, তার বেশি শাস্তি হলেও অন্যরা ভয় পেতো।
আবু তোরাব হাই স্কুলের শিক্ষক রবিউল হোসেন নিজামী বলেন, হেলপার গাড়ি চালাচ্ছিল।
সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ মিরসরাইয়ে চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের দাবি স্থানীয়দের।
মিরসরাই’র সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, ট্রমা সেন্টার স্থাপন করার দাবি।
নিহতদের স্মরণে মিরসরাই ট্র্যাজেডির দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ অন্তিম ও আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয় আবেগ।