২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ || ৬ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

আজমল হোসেন, মীরসরাই * মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের রাজধানী মাসকাট শহর থেকে প্রায় ১২শ’ কিলোমিটার দূরে সালালাহ। প্রকৃতির সব রূপ ঢেলে দিয়ে সাজিয়েছে ওমানের এই অঞ্চলটিকে। সালালার প্রকৃতি যে কতো অপরূপ তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এখানে প্রতি পরতে পরতে যেন স্বর্গ সুখের অনিন্দ্য ছোঁয়া লুকিয়ে আছে।

সালালাহ শহরের প্রাণকেন্দ্রেই প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠেছে সেলিম পোলট্রি ফার্ম। মোহাম্মদ সেলিম নামে এক ব্যবাসায়ী এটি গড়ে তুলেছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে মীরসরাইয়ের সন্তান পুরো সালালাহ শহরে পোলট্রি শিল্পের জন্য বিখ্যাত একজন ব্যক্তি। শুধু পোলট্রি নয় হ্যাচারি ও গরুর দুধ সরবরাহেও তিনি সমান সফল। এছাড়া সালালাহ শহরের প্রায় ৭০ শতাংশ গরুর মাংসের চাহিদা পূরণ হয় তার প্রতিষ্ঠান থেকে। চাহিদার ৯০ শতাংশ মুরগির গোশতের যোগানদাতা তার প্রতিষ্ঠান।

‘সেলিম পোল্ট্রি’ ফার্মে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। বিশাল আকারের চারটি ফার্মের আলাদা আলাদা শেড। সালালাহ অঞ্চলে সর্বশেষ ঘুর্ণিঝড় মেকুনুর আঘাতে তার প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেজন্য দুটো ফার্মের সংস্কারের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। বাকি দুটোর একটিতে ছোট বাচ্চা এবং অন্যটিতে বিক্রির উপযোগী মোরগ রাখা হয়েছে।

কথা হয় সফল উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সেলিমের সাথে। তিনি বলেন, ওমানে আসার পর থেকেই আমার ব্যবসার প্রতি ঝোঁক ছিল। আমি দেশে থাকতে পোলট্রির বিষয়ে দেখে দেখে জ্ঞান লাভ করেছিলাম। বিদেশে এসে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে সফল হই। আমার কাছে বর্তমানে ৪ টি পোলট্রি ফার্ম, একটি ডেইরি ফার্ম, একটি গট (ছাগল) ফার্ম রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেখা শোনার জন্য ১৪ জন কর্মচারী রয়েছে। এছাড়া আমি ছাড়াও আমার পরিবারের ৩ জন সদস্যও এসব দেখাশোনায় যুক্ত।

এ ব্যবসায় ঝুঁকি ও লাভ সম্পর্কে বলেন, দেখেন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি থাকবে। তবে বিদেশের মাটিতে অস্বাভাবিক কিছু হয়না। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই, দাম বাড়ানো কমানোর অবৈধ কোনো পন্থা নেই। তাই ব্যবসা করে অনেক সুখ পাওয়া যায়।

একটি ফার্মের ভেতরে মুরগিগুলো দেখিয়ে বলেন, এই মুরগিগুলো এখন বিক্রির উপযোগী। বাচ্চা ফার্মে আনার ৩০ দিন পর থেকে বিক্রি শুরু করা যায়। সাধারণত আমাদের এখানে ১ রিয়েল ২০০ পয়সা থেকে শুরু করে ১ রিয়েল ৫০০ পয়সা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হয়, যা বাংলাদেশী টাকায় ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে মাসকাটে মুরগি সস্তা। সেখানে ১ রিয়েলে মুরগি পাওয়া যায়। প্রতিমাসে ৪০ হাজার মুরগির চাহিদা পূরণ করে আমার প্রতিষ্ঠানগুলো।

এতদূর আসার পেছনে প্রতিকূলতা বা অনুপ্রেরণা সম্পর্কে বলেন, দেখেন মানষিক শক্তি , নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে লক্ষ্য স্থির করে সাধনা করলে যে কেউ সফল হবেই। আমি যখন এখানে এসব শুরু করি অনেকে হেসেছে। এখন তারা আমাকে বাহবা দিচ্ছে। এখানকার অনেক বাংলাদেশি আছে যাদের আমি মানুষ করেছি। আয়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি। সততার সাথে এখনো টিকে আছি।

ব্যবসায় ছাড়াও মোহাম্মদ সেলিম রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিনি বাংলাদেশ সোসাইটি, চট্টগ্রাম সমিতি ছাড়াও ‘ওমান মীরসরাই সমিতি’ সালালাহ শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন। সালালাহ শহরে কোনো বাঙালি বিপদে পড়লে মোহাম্মদ সেলিম সবার আগে এগিয়ে আসেন। সকলের সুখ, দুঃখে পাশে থাকায় এখানে তার জনপ্রিয়তাও আকাশ ছোঁয়া।

মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন (মাস্টার) বলেন, ব্যবসায়িক কাজে প্রতি ৫ মাস পর ওমান আসতে হয়। ওমান আসলে সেলিম ভাইয়ের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হতে হয় আমাকে। তিনি শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নন, একজন বড় মনের মানুষও বটে। দেশের বাইরে ভিন্নধর্মী এমন একটি সেক্টর নিয়ে কাজ করে তিনি সত্যিই নজির সৃষ্টি করেছেন। এমন সোনার মানুষদের উপর ভর করেই আমার বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

ওমানে সালালাহ এলাকায় বসবাসকারী মীরসরাইয়ের সন্তান সোহেল মিরজাদা বলেন, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নয় ব্যক্তি হিসেবেও তিনি অনেক বেশি ব্যক্তিত্ববান। আমরা তাকে সেলিম আংকেল বলে ডাকি। আমাদের বিপদে-আপদে সব সময় তাকে পাশে পাই। উনার জন্য ওমানে বসাবাসীকারী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ মীরসরাইয়ের মানুষকে বেশি সম্মান করে।

প্রসঙ্গত, মোহাম্মদ সেলিম মীরসরাই উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নের পূর্ব সাহেরখালী গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র।