রাত পোহালেই (২৫ জুলাই) শুরু হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাচনী কর্মকর্তারা মঙ্গলবার ভোটের সরঞ্জাম সংগ্রহের কাজ শেষ করেছেন।
দেশটির প্রায় ৮৫ হাজার ভোটকেন্দ্রে চলবে ভোটগ্রহণ। এসব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৪ সেনা নামানো হবে। বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় দেশজুড়ে একযোগে ভোট শুরু হবে।শেষ হবে সন্ধ্যা ৬ টায়।প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ ভোটার ভোট দেবেন।
নির্বাচনের দিন দেশটির মেইনস্ট্রিম রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন প্রার্থী সন্ত্রাসী হামলার হুমকিতে রয়েছে বলে আশঙ্কা করছে পাকিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনী। ইতোমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার সময় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৩ জুলাই বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ১৫১ জন নিহত হওয়ার ঘটনা এরমধ্যে অন্যতম।
এদিকে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কারণে সমালোচিত হয়েছে ইলেকশন কমিশন অব পাকিস্তান (ইসিপি)।
তবে সেনা প্রধান কামার বাজওয়া বলেছেন, নির্বাচনের দিন সেনাসদস্যরা ইলেকশন কমিশনের সব নিয়মনীতি মেনে কাজ করবে।
ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় প্রায় আট লাখ নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে ছিল। ৭০ বছরের মধ্যে ৩৬ বছরই দেশটি শাসন করেছে সামরিক জেনারেলরা। দেশ রক্ষা ও পররাষ্ট্র-বিষয়ক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী।
এই ভোটেই আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাকিস্তানের সংসদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। জাতীয় সংসদ ও চারটি প্রদেশের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে জনগণ।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আদালতের নির্দেশে রাজনীতিতে আজীবন নিষিদ্ধ হওয়ায় তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট হন তার ভাই শাহবাজ নওয়াজ।
তবে দুর্নীতির দায়ে কারাদণ্ড পাওয়া নওয়াজের রাজনীতিতে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেলেও নির্বাচনে দলের কর্মী ও সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে দণ্ড মাথায় নিয়েই তিনি এ মাসের শুরুর দিকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছেন। বর্তমানে তিনি ইসলামাবাদের আদিয়ালা কারাগারে আছেন।
শাহবাজের নেতৃত্বেই পুনরায় ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে পিএমএল-এন। যদিও শাহবাজসহ দলটির প্রভাবশালী অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির তদন্ত করছে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টাবিলিটি ব্যুর (এনএবি)।
নির্বাচনী দৌড়ে শাহবাজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান।
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)এবং ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দুই দলই নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে চূড়ান্ত প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি নিজেদের শক্তি জানান দিয়েছে।
তবে পিএমএল-এন এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর চলমান বৈরিতার কারণে জনমত ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) পক্ষে যেতে পারে বলে ধারণা অনেক রাজনীতি বিশ্লেষকের।
যদিও ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খানের সম্প্রতি প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক বইতে তার চারিত্রিক বিভিন্ন ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পিটিআই নেতাদের দাবি,ইমরানের সম্মানহানি করতে পিএমএল-এন অর্থের বিনিময়ে রেহামকে দিয়ে ওই বই লিখিয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়াল ভুট্টো জারদারিও (২৯) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। পারিবারিক ইতিহাস এবং বেনজিরের হত্যাকাণ্ডের কারণে জনগণের সহমর্মিতা ও সমর্থন তার পক্ষে আছে।
সবগুলো জনমত জরিপই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিয়েছে। এমন কী জোট সরকার গঠন করতেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিলওয়ালের ছোট্ট দলই সব হিসাব পাল্টে দিতে পারে।