সমাজের মঙ্গল ও সাংবাদিকতার স্বার্থেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জরুরি। তাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধক হয় এমন আইন প্রয়োজনে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করতে হবে। দরকার হলে পুরনো আইন বাতিল করে নতুন করে গণমাধ্যমবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে। বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৮ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ বিষয়ক আলোচনায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপনে টিআইব’র সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকসম্পর্ক-বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. গওহর রিজভী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইব’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইব’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ-বিষয়ক আলোচনায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআইবি’র আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম। প্রবন্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারাসমূহ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। পরে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, দৈনিক প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন, ঢাকা বাংলা (ডিবিসি) চ্যানেলের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং ইউএনবি’র সাবেক নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমদ। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
লেখক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা নাগরিকের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত করতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা সেই সংগ্রামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বারবার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আইন করে সব বন্ধ করে দিতে হবে। এতে মনে হচ্ছে সরকার কিছুটা ছাড় দিলে আবার কিছুটা কঠিন হচ্ছে। আমরা চাই সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আরো বৃদ্ধি পাক। এজন্য নাগরিক সমাজকে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে এই আইনটা কতটা তথ্যপ্রকাশ বান্ধব হবে তা নির্ভর করবে নাগরিক সমাজের ভূমিকার ওপর।”
সাংবাদিক রিয়াজ আহমদ বলেন, “আইন তো পাথরে খোদাই করা কোন বিষয় নয় যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। সরকার চাইলেই তা পরিবর্তন করতে পারে। তাই হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করতে হবে অথবা আইনের অস্পষ্ট বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়নে বিধি প্রণয়ন করতে হবে।” আইন প্রণয়নের পূর্বে অংশীজনদের সাথে সরকারের আলোচনা করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, “সরকার আলোচনা করে ঠিকই কিন্তু অংশীজনদের সুপারিশ আমলে নেয় না। তার মানে তারা বিশ^কে দেখাতে চায় যে আমরা সবার সাথে কথা বলেই আইন করি। কিন্তু আসলে তা বাস্তবায়ন হয় না।”
প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন বলেন, “সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্যই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করে আমাদের উচিৎ, এ ব্যাপারে ‘প্রতিক্রিয়া’ না দেখিয়ে ‘সাড়া’ দেয়া। কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এমনিতেই অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এই পেশাকে আরো কতটা সহজ করা যায় সে চেষ্টাই করা উচিত।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বাংলা চ্যানেল (ডিবিসি)-এর সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, “এই আইন কোনভাবেই গণমাধ্যমবান্ধব নয় এমনকি জনবান্ধবও নয়। এর মাধ্যমে হেরেছে জনগণ, গণতন্ত্র আর হেরেছে রাজনীতিবীদরা। তাই অবিলম্বে সরকারকে এই আইন বাতিল করে নতুন করে আইন প্রণয়নের অনুরোধ করছি।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সরকারের স্ববিরোধিতার পরিচায়ক। কারণ জাতিসংঘের যে সনদের উপর ভিত্তি করে আমরা আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন করছি তার ১৩ অনুচ্ছেদে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জনগণ, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রয়াসকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংগঠনসমূহ যাতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারে, তার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ
…
[Message clipped] View entire message
7 Attachments