দেশের প্রথম ও একমাত্র প্রজাপতি বিশেষায়িত পার্ক ‘বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড’ জাতীয় পরিবেশ পদক ২০১৮-তে ভূষিত হয়েছে। পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচারে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক প্রদান করা হয় ইন্ট্রাকো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশকে।
বুধবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াদ আলী।
উল্লেখ্য, এর আগে পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখায় বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশ লিমিটেডকে এইচএসবিসি-ডেইলি স্টার ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড-২০১২ তে ‘ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। এছাড়াও ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বিভাগীয় পরিবেশ পদক’ লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি।
‘সেভ দ্য বাটারফ্লাই সেভ দ্য আর্থ’ এ থিম নিয়ে ২০১২ সালে চট্টগ্রামে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র প্রজাপতি বিশেষায়িত পার্ক ‘বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড’। কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষা এ পার্ক চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমির কাছাকাছি এয়ারপোর্টের পাশেই নির্মাণ করা হয়। প্রখ্যাত প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ ড. শফিক হায়দার চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় পার্কটি। এটি নির্মাণের সময় নজর রাখা হয় বাস্তুসংস্থানের দিকেও। পার্কের সবধরণের ল্যান্ডস্কেপ, স্থাপনা এবং কাঠামোতে রাখা হয়েছে পরিবেশ সহায়ক সবুজ ডিজাইন। উদ্বোধনের সময় পার্কটি ছিল সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ও একমাত্র জীবিত প্রজাপতির পার্ক।
পার্কটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৩ প্রজাতির প্রজাপতির বিভিন্ন সময়ে প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রজননকৃত ১৭,০০০ প্রজাপতির মধ্যে ৮,০০০-এর বেশি প্রজাপতি মুক্ত পরিবেশে উন্মুক্ত করা হয়েছে । পার্কে রয়েছে বাস্তুসংস্থান সহায়ক বাগান এবং প্রজাপতি সহায়ক ২৫০ প্রজাতির ২০০০ গাছ। পার্কটিকে সাজানো হয়েছে কয়েকটি থিমে- জাদুঘর, সংরক্ষণাগার, গবেষণাগার, ফার্ন ল্যান্ড, এডুকেশন এলাকা, কিডস জোন, সাফারি জোন এবং লেকসাইড এলাকা।
প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে র্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি উন্মুক্তকরণ ও আলোচনা সভা আয়োজনের মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে আসছে পার্কটি। এছাড়াও পরিবেশ ও প্রজাপতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর শিশু দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ঈদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালন করা হয় পার্কটির উদ্যোগে। বিশেষ বিশেষ দিবসগুলোতে শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র্যালি ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের।
প্রতিবছর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী পার্ক পরিদর্শন এবং শিক্ষাসফর কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং এগুলোর কারণ ও সমাধানের উপায় সম্পর্কে প্রায় ৫০টি আলোচনাসভা আয়োজন করার মাধ্যমে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা হয়। পার্কটি প্রতি বছর আয়োজিত পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণ করে প্রজাপতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে আসছে। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রজাতির প্রজাপতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও ছবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ, তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শনের মাধ্যমে এ সচেতনতার সৃষ্টি করা হয়।