উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার সারাদেশে গড় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সকাল ১০টার পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর সংশ্লিষ্ট বোর্ডের চেয়ারম্যানরা তাদের স্ব স্ব বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অংশ নেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।
মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের বক্তব্যের আগে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশ করেন। অনুলিপি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন। এরমধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ শিক্ষার্থী, যা গড়ে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে মোট জিপিএ–৫ পেয়েছেন ২৯ হাজার ২৬২ জন। ছাত্রের পাসের হার ৬৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আর ছাত্রীর পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে অর্থাৎ এইচএসসিতে পাস করেছেন ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৮ শিক্ষার্থী, যা গড়ে ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ২৫ হাজার ৫৬২ জন শিক্ষার্থী।
মাদ্রাসা বোর্ডে অর্থাৎ আলিমে এবার পাস করেছেন ৭৬ হাজার ৯৩২ জন শিক্ষার্থী, যা গড়ে ৭৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এরমধ্যে জিপিএ–৫ পেয়েছেন ১ হাজার ২৪৪ জন শিক্ষার্থী।
কারিগরী শিক্ষা বোর্ডে অর্থাৎ ভোকেশনালে এবার পাস করেছেন ৮৯ হাজার ৮৯ জন, যা গড়ে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৫৬ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন জিপিএ–৫।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (http://www.educationboard.gov.bd) থেকে ফল জানা যাবে।
মোবাইলে ফল
যে কোনো মোবাইল থেকে এসএসএম করে পরীক্ষার ফল জানতে পারবেন শিক্ষার্থী।
আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এইচএসসির ফল জানাতে HSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৮ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
আলিমের ফল জানতে Alim লিখে স্পেস দিয়ে Mad স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৮ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে পাওয়া যাবে ফল।
এছাড়া এইচএসসি ভোকেশনালের ফল জানতে HSC লিখে স্পেস দিয়ে Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৮ লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।
ফল পুনঃনিরীক্ষা
টেলিটক মোবাইল ফোন থেকে আগামী ২০ থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে বলে জানিয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।
ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-PIN) দেওয়া হবে।
আবেদনে সম্মত থাকলে RSC লিখে স্পেস দিয়ে YES লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।
প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য দেড়শ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে।
যে সব বিষয়ের দু’টি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দু’টি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে।
একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
তবে ম্যানুয়েল কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডঃ উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। নগরীসহ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পাবর্ত্য জেলার ২৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯৬ হাজার ৮৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬০ হাজার ৭৫৫ জন। এর মধ্যে জিপিএ–৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬১৩ জন।
আজ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এইচএসসিতে এবছর পাসের হার ৬২ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ–৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬১৩ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ, মানবিকে ৫১ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ৬৮ দশমিক ০১ শতাংশ।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ১০০টি কেন্দ্রে এইচএসসিতে ২৫৩টি কলেজের ৯৭ হাজার ৬৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ১১ জন ছাত্র ও ৪৯ হাজার ৬৭৩ জন ছাত্রী।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবছর অংশ নেয় ২০ হাজার ৬৫৪ জন (ছাত্র ১১ হাজার ৬৭৯ ও ছাত্রী ৮ হাজার ৯৭৫ জন)। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে অংশ নেয় ৩৮ হাজার ৮৩৬ জন (ছাত্র ২১ হাজার ২৩১ ও ছাত্রী ১৭ হাজার ৬০৫ জন)। মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নেয় ৩৮ হাজার ১৮৬ জন (ছাত্র ১৫ হাজার ১০১ ও ছাত্রী ২৩ হাজার ৮৫ জন)।
এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিলো ৭৩ হাজার ৭০৩ জন। এরমধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৩৪ হাজার ২৮৭ জন এবং ছাত্রী ৩৮ হাজার ৭১৬ জন। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ২২ হাজার ৩৭১, মানোন্নয়নে ১ হাজার ৪২৭ এবং প্রাইভেট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৩ জন।