বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও জাতিসংঘ ঘোষিত রবিবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন, দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দুর্নীতিবিরোধী বার্তা সম্বলিত টিভি বিজ্ঞাপন প্রচার উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি দুর্নীতিদমন কমিশন ও টিআইবি’র যৌথ উদ্যোগে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আজ সকালে দেশের ৬৪টি জেলায় সমন্বিতভাবে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় গঠিত ৪৫টি সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) অঞ্চলে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১১.০০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকের কেন্দ্রের সামনে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ টিআইবি সদস্য ও কর্মীবৃন্দ, টিআইবি’র অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যসহ নানা শ্রেণি- পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। মানবন্ধন থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের বিবেচনার জন্য ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি।
মানববন্ধনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী আইনী ও নীতি কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও সেই আইন চর্চা ও প্রয়োগে এখনও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সরকারী চাকরী আইনের মত বিপরীতমুখী নানা আইনের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিতের সম্ভাবনা হ্রাস পেয়েছে। তাই শুধু মুখে দুর্নীতি প্রতিরোধের কথা বলে দুর্নীতি হ্রাস করা সম্ভব হবে না। দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কার্যকর প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার এবং তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা থাকতে হবে।”
জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদের ১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জনগণ, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রয়াসের অপরিহার্যতা পুনর্ব্যক্ত করে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় মত ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার চূড়ান্ত ঝুঁকি রয়েছে। অবিলম্বে এ আইনের বিতর্কিত ধারাসমূহ পরিবর্তন, সংশোধন এমনকি প্রয়োজনে আইনটি বাতিল করে নতুনভাবে প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দুর্নীতিবিরোধী পরিবেশ সৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার ব্যর্থ হবে।”
মানববন্ধনের পর বিকালে ধানমন্ডিস্থ দৃক গ্যালারীতে ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ২০১৮’ এর পুরস্কার ঘোষণা এবং বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়নপ্রাপ্ত কার্টুনিস্ট ও আলোকচিত্রীদের মাঝে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করা হয়। একইসাথে পুরস্কার বিজয়ী ও নির্বাচিত কার্টুন ও আলোকচিত্র নিয়ে সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ড্যানিশ রাষ্ট্রদূত H.E. Ms. Winnie Estrup Petersen । অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে সুইডিশ অ্যাম্বাসির ডেপুটি হেড অব মিশন Mr. Anders Öhrström ও বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) এর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইন্সটিটিউশনাল অ্যাডভাইজার Dr. Luke Mukubvu । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
এসময় ড্যানিশ রাষ্ট্রদুত H.E. Ms. Winnie Estrup Petersen বলেন, “তরুণদের সম্পৃক্ত করে এধরণের আয়োজন দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে একটি কার্যকর মাধ্যম। আমি প্রত্যাশা করি, জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে টিআইবি যেভাবে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সফল হবে।”
১৩তম ‘দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা ২০১৮ এর ‘ক’ বিভাগে (১৩-১৮ বছর) ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আইজায়া ট্রিপ্লেন্ড হেভেন, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল হাসান ও ঢাকার সোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। আর ‘খ’ বিভাগে (১৯-২৫ বছর) ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাসুদ আল মামুন, আশরাফুল ইসলাম ও প্রসুন হালদার। উভয় গ্রুপের বিজয়ী তিনজনকে যথাক্রমে ৭৫ হাজার, ৫০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। এছাড়া দু’টি বিভাগ থেকে মোট ৩৫ জন কার্টুনিস্টকে বিশেষ মনোনয়ন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, এছর এই দু’টি বিভাগে মোট ৭৫১টি কার্টুন জমা পড়ে।
৪র্থ ‘দুর্নীতিবিরোধী আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ২০১৮’-এ ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকার করেন যথাক্রমে দৈনিক কালের কন্ঠের চিত্র সাংবাদিক মোহাম্মদ আসাদ, ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী নজরুল ইসলাম এবং ফেয়ার নিউজ সার্ভিসের স্টাফ আলোকচিত্রী রেহমান আসাদ। বিজয়ী তিনজনকে যথাক্রমে ১ লাখ, ৬০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। এছাড়া মোট ১৬ জন আলোকচিত্রীকে বিশেষ মনোনয়ন দেয়া হয়। এবছর এই আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় পেশাদার ও সৌখিন আলোকচিত্রীদের কাছ থেকে মোট ৪৯৬টি আলোকচিত্র জমা পড়ে।
কার্টুন প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়নপ্রাপ্ত মোট ৬১টি কার্টুন ও আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও বিশেষ মনোনয়নপ্রাপ্ত মোট ২৩টি আলোকচিত্র নিয়ে আজ ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধানমন্ডিস্থ দৃক গ্যালারির গ্যালারি-২ এ প্রদর্শনী চলবে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে।